প্রবাহ ডেস্ক :
সড়কে বড় বড় গর্ত; পাশেই রাখা পাইপ, ভেকু মেশিন, ছোট-বড় নির্মাণযন্ত্র। কোথাও কাদাপানি, ভেঙে ফেলা দোকান-বাড়ির অংশবিশেষ। যানবাহন চলাচল বন্ধ, কখনও মানুষের লাফিয়ে লাফিয়ে চলা, আবার কখনও খুব সাবধানে সড়কের কোনো অংশে পা ফেলে কোনোমতে পেরিয়ে যাওয়া। এটি রাজধানীর মুগদা এলাকার সড়কের বর্তমান চিত্র।
প্রায় দুই মাস ধরে এই এলাকার মানুষ বিধ্বস্ত সড়কের এমন যাতনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সংস্কার কাজের কারণে বন্ধ থাকা মুগদা-মান্ডা সড়কটির বেহাল দশার সঙ্গে বাসিন্দাদের ভোগান্তি বাড়িয়েছে কাজের ধীরগতি। অবশ্য, স্বাভাবিক সময়ে নিত্য দিনের যানজট আর বর্ষা মৌসুমে জমে থাকা পানির দুর্ভোগ নিয়ে মাত্র ১৭ ফুটের এই রাস্তা ঘিরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের।
মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা ব্রিজ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। ব্যাংক, অফিসপাড়াখ্যাত মতিঝিল খুব কাছে হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষের বসবাস এই এলাকায়। পাশেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। যে কারণে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এই সড়কে নামে মানুষের ঢল।
এলাকাবাসীর এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে রাস্তা প্রশস্ত করতে মাঠে নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। রাজউকের সহযোগিতায় গত এপ্রিল মাসে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেই সময় রাস্তার দুই পাশের অবৈধ দোকান, স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়।
লক্ষ্য ১৭ ফুটের রাস্তা প্রশস্ত করে ৫০ ফুট করা। যেখানে ৪০ ফুট থাকবে মূল সড়ক। আর দুই পাশে পাঁচ ফুট করে ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে শুরু হয় সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রথমে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য রাস্তার নিচে বড় পরিসরে ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তা খুঁড়ে ফেলা হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মেয়র-কাউন্সিলর অপসারণের কারণে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীর ভোগান্তি আরও বাড়ে। এর মধ্যে নতুনভাবে ফের কাজ শুরু হলেও ধীরগতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বাসিন্দারা।
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল, এমনকি চলছে না রিকশাও। খানাখন্দ, বড় বড় গর্ত, আবার গর্তের মাটি তুলে সড়কের অন্য অংশে ফেলে রাখা; সবমিলিয়ে যাতনার মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে এলাকার মানুষদের।
দীর্ঘ সময় ধরে সড়কের এমন বেহাল দশায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। তারা বারবার দাবি জানিয়ে বলছেন, দ্রুত যেন সড়কটির কাজ শেষ করা হয়। মুগদার স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম সড়কটির বর্ণনা দিয়ে বলেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়কের এমন বেহাল দশা করে রাখা হয়েছে। চলাচলের কোনো উপায় নেই। কোনোভাবেই চলাচল করা যায় না। খুব বিপদের মধ্যে আছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। পুরো রাস্তাজুড়ে বড় বড় গর্ত করে রাখা হয়েছে। মানুষের সমান পাইপ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া ভেকু মেশিন, বড় বড় যন্ত্র রাখা হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের দিকে না তাকিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিটি কর্পোরেশন সড়কের কাজ করে যাচ্ছে। মতিঝিলে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন নিক্সন আহমেদ। পরিবারসহ মুগদা এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। সড়কটির বেহাল দশা বর্ণনা করে তিনি বলেন, এই সড়কে এখন কোনো যানবাহন চলাচল করে না।
আমরা যারা এই এলাকায় বসবাস করি তাদের প্রতিদিন খুব কষ্টে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তা এত খোঁড়াখুঁড়ি করা যে চলাচল করতে গেলে লাফ দিয়ে যেতে হয়। কাদা পানি তো আছেই। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের এমন অবস্থা তবুও কাজ শেষ করার নাম নেই। আমরা এলাকাবাসী রীতিমতো বিরক্ত। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার সিটি কর্পোরেশনের কাছে জানানো হয়েছে দ্রুত কাজটি শেষ করার জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পড়ে আছে সড়কটি।
মিরপুরের ‘দুঃখ’ ৬০ ফুট সড়ক : রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম এলাকামিরপুর। বিভিন্ন সময় এ এলাকায় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেলের লাইন-৬ এর নির্মাণকাজ চলেছে দীর্ঘদিন ধরে।
এ সময় চরম ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয় মিরপুরবাসীকে। সেই ভোগান্তি থেকে একটু হলেও নিস্তার দিয়েছে মিরপুরের ‘৬০ ফিট নতুন রাস্তা’। স্থানীয়রা জানান, মেট্রোরেল চালু হয়েছে দুই বছরের বেশি সময় হলো। নির্মাণকাজ শেষে সংস্কার করে পরিপাটি করা হয়েছে রোকেয়া সরণির সড়ক। মিরপুরের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নকাজও শেষ হয়েছে। এখন সেখানে চোখে পড়ে না ভোগান্তির ছিটেফোঁটা। ভোগান্তিমুক্ত মিরপুরবাসী তা-ই যেন ভুলতে বসেছে ৬০ ফুট সড়কের অবদান।
দুর্দিনে ভোগান্তি থেকে বাঁচাতে যে সড়কটি বেশি ব্যবহার করা হয়েছে, সেই ৬০ ফুট সড়ক এখন অবহেলিত। বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে এটি। স্থানীয়রা জানান, বর্ষায় সড়কটির বড় একটি অংশ ডুবে থাকে পানিতে। কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এখন বর্ষা নেই, নেই পানিও। রয়ে গেছে রাস্তার ক্ষতচিহ্নগুলো। গর্তগুলো দিনদিন বড় হয়েছে। সেই গর্তে ব্যক্তি উদ্যোগে খোয়া, বালি ফেলে সমান্তরাল করার চেষ্টা চলেছে। এখন সড়কটি ধুলা-বালির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিন মিরপুর, কল্যাণপুর, পশ্চিম আগারগাঁও, পীরেরবাগ, ঝিলপাড়, মিরপুর-২ এলাকার হাজার হাজার মানুষ সড়কটি ব্যবহার করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) দুটি ওয়ার্ডের অধীন। এটির আগারগাঁও অংশ ২৮ নম্বর এবং মনিপুর অংশ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে।
কিন্তু কেউই সড়কটি সংস্কার কিংবা পুনর্র্নিমাণে উদ্যোগ নেয়নি। বরং গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দুই কাউন্সিলর ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়ায় আরও বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী। এখন যে যার মতো করে সড়ক কাটছেন, ড্রেন করছেন; পানির লাইন সংস্কারের নামে রাস্তার ভালো অংশও কেটে ফেলছেন কেউ কেউ। দেখার যেন কেউ নেই।
আগারগাঁও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সামনে থেকে মিরপুর-২ নম্বর পর্যন্ত সড়কটির নাম ‘কামাল সরণি’। অধিকাংশ মানুষ সড়কটি ‘৬০ ফুট সড়ক’ নামেই চেনেন। ১৯৯৫ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তৈরি করা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুযায়ী সড়কটি নির্মাণ করা হয়।
২০১৪ সালের শেষের দিকে ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩.৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির বড় অংশ এখন দখল হয়ে গেছে। প্রস্থে ৬০ ফুট বলেই সড়কটি ‘৬০ ফিট’ নামে বেশি পরিচিত। এখন ফুটপাত তো দূরের কথা মূল সড়কের প্রায় ৩০ ফুট (প্রস্থ) চলে গেছে দখলে।
কুড়িল-প্রগতি সরণি দিয়ে দুঃস্বপ্নের যাত্রা : রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক প্রগতি সরণির কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কালাচাঁদপুর (নদ্দা) পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। বিশাল এ কর্মযজ্ঞ ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে দেওয়া হয়েছে সিমেন্টের মোটা ব্লক। ফলে রাস্তা অনেকটা সরু হয়ে গেছে। তিন লেনের গাড়ি এসে এক লেনে জড়ো হচ্ছে।
ফলস্বরূপ, কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি রাস্তায় দিন-রাত যানজট লেগে থাকছে। যাত্রীদের এ পথ পাড়ি দেওয়া যেন দুঃস্বপ্নের যাত্রায় পরিণত হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে কিংবা ব্যক্তিগত পরিবহনে বসে কাটাতে হচ্ছে। ফলে একদিকে দৈনিক মূল্যবান অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকে।
জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর এবং কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজ চলমান। চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। প্রাথমিক পর্যায়ে বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল, যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় চলছে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ। এটি করার জন্য যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের ফুটওভার ব্রিজের আধুনিক এস্কেলেটর বন্ধ রাখা হয়েছে।
কুড়িল থেকে কালাচাঁদপুর পর্যন্ত রাস্তায় সরেজমিনে দেখা যায়, এ অংশে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তর কার্যক্রম চলছে। কুড়িল থেকে কালাচাঁদপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। মাটি খুঁড়ে ওয়াসার পাইপ, সুয়ারেজ ও গ্যাসের লাইন বসানো হচ্ছে। ফলে রাস্তার দুই পাশে যানবাহন এক লেনে চলছে। তৈরি হচ্ছে ব্যাপক যানজট। কখনও কখনও এ জট পৌঁছাচ্ছে বিমানবন্দর পর্যন্ত। অন্যদিকে, নতুনবাজার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত ঠেকছে এটি। সকাল ৮টা থেকে এ যানজট শুরু হয়ে চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।
গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে অত্র এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালের অফিস টাইম এবং বিকেলে বাসায় ফেরার সময় প্রচণ্ড যানজট তৈরি হয়। যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, কুড়িল থেকে নতুন বাজার যেতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। রাস্তার দুই পাশে খোঁড়াখুঁড়ি চলায় মানুষ যানজটের মধ্যে হেঁটেও গন্তব্যে রওনা দিতে পারছেন না। চতুর্মুখী ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে পথচারীসহ স্থানীয়দের।
বিশেষ করে যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ মুখে যানবাহনের জটলা বেশি দেখা যায়। রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, গণপরিবহন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এ এলাকার রাস্তার দুই পাশে খোঁড়াখুঁড়িও বেশি। গণপরিবহনগুলো ইচ্ছামতো যাত্রী ওঠা-নামা করায় এ সড়কে গাড়ির চেয়ে হাঁটার গতি বেশি লক্ষ করা যায়। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশও সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না। তারপরও তারা যানজট স্বাভাবিক রাখতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ দিকে, ফুটওভার ব্রিজের এস্কেলেটর বন্ধ থাকায় ব্রিজ ব্যবহারে মানুষের মধ্যে অনীহা তৈরি হয়েছে। যে যার মতো রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে পারাপারের চেষ্টা করছেন। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এ সড়ক ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ পথে চলতে গেলে কমপক্ষে দুই ঘণ্টার বেশি সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। সীমাহীন দুর্ভোগ ও যানজটে তারা অতিষ্ঠ। কিন্তু উন্নয়নকাজ চলায় তারা বাধ্য হচ্ছেন ভোগান্তি সহ্য করে নিতে। তাদের দাবি, দ্রুত যেন এ কাজ শেষ করা হয়। কারণ, এটি রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। এখানে যানজট তৈরি হলে তা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
কুড়িল ও প্রগতি সরণি দিয়ে যাতায়াতকারী জুয়েল আহমেদ বলেন, প্রতিদিন উত্তরা থেকে এ রাস্তা হয়ে রামপুরায় অফিস করতে হয়। উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তার মন্তব্য, ‘উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলবে, পাশাপাশি জনগণের ভোগান্তি যাতে কম হয় সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। ৩০ মিনিটের রাস্তা যদি দুই ঘণ্টায়ও পার না হওয়া যায়, এ কষ্ট তো কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। আমাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নয়নের এ কাজ শেষ করা হোক।
হাতিরঝিলের মধুবাগ থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতে হয় ইফতি মাহমুদকে। তিনি বলেন, মধুবাগ থেকে আগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগত। এখন দুই ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যায় না। রাস্তা কাটার কারণে যানবাহনের মধ্যে মারাত্মক রেষারেষি চলে।
এ কারণে অনেক সময় ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় মোটরসাইকেল নিয়ে। আমরা চাই কাজটা দ্রুত শেষ হোক, মানুষও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাক। এখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম বিমানবন্দর-রামপুরা সড়ক।
এ সড়কে স্বাভাবিক সময়ে যানজটের চাপ বেশি থাকে। এর মধ্যে উন্নয়নকাজ চলায় সড়কটি সরু হয়ে গেছে। ফলে যানজটের পরিমাণও বেড়েছে। এ বিষয়ে কালাচাঁদপুর এলাকায় দায়িত্বপালন করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, দুই পাশের রাস্তায় প্রায় অর্ধেকের মতো জায়গাজুড়ে উন্নয়নকাজ চলছে। ফলে দুই পাশে এক লেন ধরে গাড়ি চলাচল করতে পারছে। তিন লেনের গাড়ি যদি এক লেনে আসে তাহলে চাপ তো বাড়বেই, এটা স্বাভাবিক।
এমনও দিন আসে, কালাচাঁদপুর ও যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রাস্তায় সৃষ্ট যানজট একদিকে চলে যায় বিমানবন্দর পর্যন্ত, অন্যদিকে রামপুরা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তবে, আমরা আমাদের সাধ্যমতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
৫ মিনিটের রাস্তা ৩০ মিনিটেও হয় না পার : উত্তরার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে এয়ারপোর্ট বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আগে রাস্তা ফাঁকা থাকলে স্বাভাবিকভাবে পথটুকু বাসে পার হতে সময় লাগত মাত্র ৪-৫ মিনিট। যানজট, ট্র্যাফিক সিগন্যাল থাকলে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পার হওয়া গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজের জন্য ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ শুরুর পর এই পথটুকু পাড়ি দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
এমন অবস্থায় ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিনিবাস, সিনএনজি ও বাইক। সরু রাস্তার ওপর বিশৃঙ্খলভাবে যাত্রীর জন্য এসব যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখায় তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। যা যাত্রীদের কষ্ট বাড়িয়েছে বহুগুণ। উত্তরার জসীমউদ্দিন বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ির ধীরগতি শুরু হচ্ছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টারের পর শুরু হচ্ছে মূল যানজট।
এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা অভিমুখে এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের শুরুর দিক থেকে মূল মহাসড়কের তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা খনন করে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। ঢাকা অভিমুখে যেসব গাড়ি সামনের দিকে যেতে চাইছে তাদের এই জায়গায় এসে সরু সড়কে ঢুকতে হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ লাইন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তরার জসীমউদ্দিন বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ির ধীরগতি শুরু হচ্ছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টার পার হওয়ার পর শুরু হচ্ছে মূল যানজট। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, ঢাকা অভিমুখে এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভারের শুরুর দিক থেকে মূল মহাসড়কের তিন ভাগের দুই ভাগ জায়গা খনন করে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কার্যক্রম চলছে। ঢাকা অভিমুখে যেসব গাড়ি সামনের দিকে যেতে চাইছে তাদের এই জায়গায় এসে সরু সড়কে ঢুকতে হচ্ছে।
ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ লাইন। আবার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস ও মিনিবাসগুলো সরু সড়কের পাশে এলোমেলোভাবে যাত্রীর জন্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। পেছন থেকে আর কোনো গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এই রাস্তাটুকু পার হতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় বাসে বসে থাকতে হচ্ছে। আবার ফ্লাইওভারে উঠতেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়।
এমন অবস্থায় একদিকে সরু সড়কে যানচলাচলের সিঙ্গেল লাইন, অপরদিকে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের ফলে তৈরি হচ্ছে মহা ভোগান্তি। অথচ তার পাশেই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এমআরটি-১ ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্পের কাজ চলমান। সব ধরনের যানবাহন থামানো নিষেধ’। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা বিরক্ত ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘অফিসের নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে বের হলেও এয়ারপোর্টের যানজটে নাকাল হতে হচ্ছে।
জানিয়ে নুরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘একদিকে রাস্তা কাটা, অন্যদিকে বাসগুলো এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে যানজট চলে যায় একেবারে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত। যেহেতু রাস্তা কাটা হয়েছে, উচিত ছিল এই জায়গায় ভালো ট্রাফিকিং ব্যবস্থা রাখা।
কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষকে প্রতিদিন ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। কোনো নিয়মশৃঙ্খলা এই জায়গায় নেই। গাড়িগুলো যে যার ইচ্ছামতো রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।
উত্তরা রাজউক কলেজের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত ইসলাম বলেন, কলেজে যেতে সমস্যা হয় না। কিন্তু আসার সময় প্রচণ্ড যানজটে নাজেহাল হতে হয়। জসীমউদ্দীন থেকে আসতে ৪০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। কলেজ থেকে ফেরার সময় ক্লান্ত হলেও মাঝেমধ্যে যানজটে বিরক্ত হয়ে পায়ে হেঁটে রাস্তাটুকু পার হই। শুধু ওই অংশটুকু নয়, আশকোনা হাজিক্যাম্পের রাস্তাও খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সেখানেও গাড়ি চলে না।
প্রতিদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমাকে দুই কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। অথচ জনবহুল এলাকা বিবেচনায় এসব কাজ দ্রুতগতিতে হওয়া এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা সুন্দর হওয়া উচিত ছিল। এমন অবস্থায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন মিরপুর, মাটিকাটা, ইসিবি, খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ এলাকা থেকে উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালে আসা রোগীরা। মুসলিমা ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, উত্তরায় অনেকগুলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।
যেখানে প্রতিনিয়ত রোগীরা ডাক্তার দেখাতে আসেন। কিন্তু বাসায় ফেরার সময় এই জায়গায় প্রচণ্ড যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। যানজট এতই দীর্ঘ হয় যে ফ্লাইওভারে উঠে সরাসরি পার হয়ে যাওয়ার অবস্থাও থাকে না। এমনও হয়েছে, এই রাস্তাটুকু পার হতে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। রোগীরা বেশি দুর্ভোগের শিকার হন, আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বাভাবিক সুস্থ মানুষই ঠিক থাকতে পারেন না। একদিকে রাস্তা খোঁড়া হয়েছে, অন্যদিকে সরু পথের ওপর আবার বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকে। বিষয়টি অন্তত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। তা না হলে দিনদিন মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
অবশ্য, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের ইউটিলিটি স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বাড়তি যানজটের বিষয়ে আগেভাগেই সবাইকে সতর্ক করেছে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। ঢাকা ম্যাস র?্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-১) প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঁঞা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজের জন্য এয়ারপোর্ট রোডে ইউটিলিটি স্থানান্তর কার্যক্রম চলছে। সেজন্য যানজটের আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করা হয়েছে। তাই এই রুটে চলাচলকারী জনসাধারণ ও পরিবহনকে যথেষ্ট সময় নিয়ে বের হওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিনটি স্টেশন থেকে ধীরে ধীরে পরিষেবা লাইন স্থানান্তর করা হচ্ছে। এটি শেষ হতে আরও সময় লাগতে পারে। কারণ, ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেললাইনের দুটি অংশ থাকবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর (বিমানবন্দর রুট) পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ যাবে মাটির নিচ দিয়ে এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল (পূর্বাচল রুট) পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার যাবে মাটির ওপর দিয়ে।
অপরদিকে, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্র্যাফিক উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সোহেল রানা জানান, সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে এখানে এসেছেন। সড়কে নিয়মবহির্ভূতভাবে যানবাহন দাঁড়ানোর বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।