উচ্চমূল্য প্রাপ্তি ও নিরাপদ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন বিলকাঠোর গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল আলিম। মাত্র ১০ কাঠা জমিতে ২২০০ চারা রোপণ করে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকার ফসল উৎপাদন করে নজির স্থাপন করেছেন তিনি।
জানা গেছে, চারা রোপণ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত পরিচর্যা, জৈবসারসহ মোট খরচ হয়েছিল মাত্র ছয় হাজার টাকা। চারা রোপণের দুই মাস পর অর্থাৎ ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে ফসল উত্তোলন করে বাজারে বিক্রি করে খরচ বাদে তার লাভ হয়েছে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মত। প্রথম বারেই কৃষক আব্দুল আলিমের এমন সফলতা দেখে এখন উৎসাহ পাচ্ছেন এলাকার অন্য কৃষকেরা।
অন্যদিকে, স্থানীয় বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই রঙিন ফুলকপি। পাশাপাশি বাজারেও সাদা ফুল কপির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এই রঙিন ফুলকপি, অনেকেই কৌতূহল বশত: কিনছেন এই সবজি। সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে পাইকারি বিক্রেতারাও হন্যে হয়ে খুঁজছেন এই রঙিন ফুলকপি। ফলে এই ফুলকপি চাষাবাদ নিয়ে এখন রঙিন স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছেন, ভালো ফলন আর ভালো দামও পাওয়ায় রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। রঙিন ফুলকপির সাফল্যে স্থানীয় কৃষি বিভাগও তাই অনেক খুশি। আগামীতে জেলা জুড়ে এ ফসল চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে কাজ করবেন কৃষি বিভাগ এমনটি দাবি কৃষি বিভাগের।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হারুনুর রশীদ জানান, রঙিন ফুলকপি চাষে জৈব সার ব্যবহার করায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেকাংশে কম লাগে। রঙিন ফুলকপি সাধারণ ফুলকপির তুলনায় পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। পুষ্টিগুণ আর ভিন্ন রঙের কারণে স্থানীয় বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এজন্য কৃষক দামও কিছুটা বেশি পাচ্ছেন। প্রথমবার কৃষক আব্দুল আলিম একটু হতাশাবোধ করেছিলেন, তবে চাষাবাদ ভাল ও দাম বেশি পাওয়ায় তিনি খুব খুশি। পাশাপাশি কৃষি বিভাগও সন্তুষ্ট এবং আশাবাদী। কেননা এ সবজি চাষাবাদ নিয়ে যে হতাশা ছিল তা দূর হয়ে গেছে। তাই আগামীতে এর প্রসার ঘটাতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, জেলার মধ্যে এটাই প্রথম রঙিন ফুলকপি চাষ। এই ফসল চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কোনো প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। কেবল জৈবসার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। এছাড়া সাদা ফুলকপির থেকে রঙিন ফুলকপি এক মাস আগে হারভেস্ট (ফসল কাটা) করাও সম্ভব। গুরুদাসপুরের কৃষক আব্দুল আলিম নিজের প্রচেষ্টা আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবার রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন।