12:44 am, December 24, 2024

শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা ঝিনাইদহের ফুলচাষীদের

দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তার কয়েকদিন পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই তিনটি দিবসে বাজার ধরতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত ঝিনাইদহের ফুলচাষীরা। দিবসগুলো উপলক্ষে ফুল বিক্রি করে সারা বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব কষবেন তারা। শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা কৃষি বিভাগ ও চাষীদের।

জানা যায়, ঝিনাইদহের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গান্না ফুলবাজার। এই বাজারে গেলেই এখন দেখা যাচ্ছে এলাহী কাণ্ড। গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপসহ প্রায় সব ধরনের ফুল দেশের প্রতিটি জেলায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। টার্গেট সামনের তিন দিবস। বসন্ত, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখেই সর্বোচ্চ দাম পাওয়ার প্রতিযোগিতায় কেউ যেন পিছিয়ে না পড়েন। প্রতিদিন এ বাজার থেকেই ফুল যাচ্ছে প্রায় কোটি টাকার। ফুলের রং, সাইজ ও প্রকৃত গন্ধ থাকায় এ জেলার ফুলের চাহিদা দেশজুড়ে। 

অন্যদিকে জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধাসহ নানা রঙের ফুল ও তার গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। ফুলের কুঁড়ি ধরে রাখতে আর ফলন ভালো পেতে বাগানগুলোকে রাখা হয়েছে যত্নে। এ বছর সমগ্র জেলায় ফুলের চাষ হয়েছে ২১৬ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিন বিভিন্ন ফুলবাজারে গিয়ে দেখা যায়, গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল সরবরাহ করে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কেউ বাগান থেকে ফুল কাটছেন, কেউ বাজারে ফুল নিয়ে আসছেন, সেই ফুল ক্রয়-বিক্রয় শেষে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত গোলাপ ৪৫ টাকা, জারবেরা ১২-১৩ টাকা, রজনীগন্ধা ৮-১০ টাকা, গাঁদা ঝুপা ৩৫০-৩৮০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রকারভেদে ২-৬ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়। 

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ঝিনাইদহে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয় এবং এই চাষ ও ব্যবসার ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। ঝিনাইদহ সদরে ৩৭ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৫০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৪৫ হেক্টর, মহেশপুরে ১৫৯ হেক্টর ছাড়াও হরিণাকুন্ডু ও শৈলকুপাতে ৯ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ফুলচাষী ফজলুর রহমান খান বলেন, ভালোবাসা দিবসে রজনীগন্ধা ও ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গাঁদা ফুল বিক্রি বেশি হয়। এজন্য বেশি করে ফুলের পরিচর্যা করতে হয়। বিশেষ করে ফুলের মান ধরে রাখতে এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। আশা করছি ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারব।

মহেশপুর উপজেলার নেপা কুল্লা গ্রামের লিটন হোসেন বলেন, সারাবছর ফুল চাষ করে কোনো রকম টিকে থাকতে হয়। আবার যখন কোনো উৎসব বা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার বাড়ে তখন দেশের বাইরে থেকে ফুল আসে আমাদের দেশে। যার ফলে ফুলের বাজার কমে যায়। তবে আমাদের দেশে যে ফুল উৎপাদন হয়, সেই ফুলগুলো যদি বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে ফুলচাষীরা অনেক বেশি লাভবান হবেন। আমাদের সরকারের কাছে একটাই চাওয়া, বিদেশ থেকে ফুল আমদানি বন্ধ করে দেশের ফুল যেন বিদেশে রপ্তানি করা যায় – সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

সদর উপজেলার গান্না গ্রামের রাজু আহমেদ বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে গোলাপ বাগান রয়েছে। বাগানের গোলাপগুলো লংস্টিক এবং লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও গোলাপি রঙের। এ রঙের ফুলের ভালোবাসা দিবসে অনেক বেশি কদর থাকে। এ বছর আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন অনেক কম। গাছে এখন নতুন কুঁড়ি এসেছে। আর যেন নষ্ট না হয় সেজন্য ভিটামিন স্প্রে করছি। ভালোবাসা দিবসের আগেই গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের দাম বেড়েছে। বাজারে একটি গোলাপ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দীন বলেন, সারাবছর ফুল বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও মূলত বেচাকেনা হয় উৎসব ঘিরে। এ মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বিশেষ করে গোলাপ ফুলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তবে আসন্ন তিন দিবসকে ঘিরে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। 

ঝিনাইদহ ফুলচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি জামির হোসেন জানান, সামনের তিন দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের দাম ভালো। সামনের দিনে আরো ভালো হবে বলে আশা করছি। 

তিনি আরো বলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা, কোটচাঁদপুর, মহেশপুরে ব্যবসায়ীদের পাওয়া তথ্যে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে। সারা বছরের লাভক্ষতি এই দিবসকে ঘিরে উঠে আসবে বলে প্রত্যাশা তার।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি আজগর আলী জানান, ফলন ভালো পেতে প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের দেয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও সদর উপজেলার প্রায় ১০টি বাজার থেকে প্রতিদিন এসব ফুল ছড়িয়ে পড়ছে সমগ্র দেশে। এ জেলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গাঁদা ফুল উৎপাদন হয়। কৃষি বিভাগ ফুলচাষীদের প্রশিক্ষণ এবং নিয়মিত বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ
- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরো খবর

- Advertisement -spot_img