প্রবাহ ডেস্ক :
রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর উপজেলার বর্ধনপুর গ্রামের আফছার আলীর ছেলে শাহিন আলম শাওনের নামে তার স্ত্রী রিনা আক্তার বাদী হয়ে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা মামলায় টাঙ্গাইল জুডিঃ ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর থানা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওয়ারেন্ট জারী করে বিচারক।
কিন্তু ওয়ারেন্ট প্রাপ্ত আসামী হয়েও সেনা বাহিনীর সৈনিক পদে এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন শাওন।
শাওনের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি শাওনের সাথে। ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে, তারপর পারিবারিক ভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হই গত ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারী মাসে।
বিয়ের পর তিন মাস ভালোই সংসার চলছিল দুজনের। ৩ মাস পর শাওন তার কর্মক্ষেত্র চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি সেনানিবাসে চলে যায়। এরপর আমার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় শাওন। বার বার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করে জানতে পারি শাওন পরকিয়ায় লিপ্ত হয়েছে।
আমার উপর দিন দিন অত্যাচার শুরু করে আমার স্বামী, আমাকে তার পরিবারের লোকজন দিয়ে বার বার হুমকি দেয় যে আমি যদি শাওনকে ডিভোর্স না দেই তাহলে মেরে ফেলবে। এরপর আমি বাধ্য হয়ে টাঙ্গাইল কোর্টে গিয়ে মামলা দায়ের করি।
পরবর্তীতে শাওন স্থানীয় মির্জাপুর থানার পুলিশ সদস্যদেরকে ম্যানেজ করে আমাকে নানা ভাবে মিমাংসা ও মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে।
আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমি চট্টগ্রামের ভাটিয়ারি সেনানিবাসে গেলে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন যে আপনারা স্বামী স্ত্রী মিমাংসা হয়ে আসেন না হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিস্তু এখনো নেওয়া হয়নি।
আমি আমার স্বামীর অত্যাচার সহ্য না করে ২০২৩ সালের মার্চের ২৭ তারিখে বিষপান করে টাঙ্গাইল কমুদিনী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এরপরও শাওন আমার কোন খোজ খবর নেই নাই।
এখন আমার স্বামী যদি আমাকে না মেনে নেয়, তাহলে আমার মৃত্যু ছাড়া কোন পথ খোলা নাই। আমি আমার স্বামীর সংসার করতে চাই।
আমি মামলা করেছি মামলায় ওয়ারেন্ট হয়েছে তাও মির্জাপুর থানার পুলিশ শাওনের পক্ষ নিয়ে তাকে গ্রেফতার করছে না। এই মামলার জন্য মির্জাপুর থানার এসআই আনোয়ার হোসেন আমাকে মুঠোফোনে কল করে নানা ভাবে হুমকি দিয়েছেন, যাতে আমি মামলা তুলে নিয়ে ডিভোর্স দেই। আমি এই লোকদের বিচার চাই।
রিনার বাবা জহির উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে গেছে,রিনা বার বার আত্মহত্যার চেষ্ঠা করে, কয়েক দফায় তাকে ঘরের ফ্যানে উড়না পেচাতে দেখেছি, তারপর নামিয়ে আনছি।
আমার মেয়ের জামাই শাওনের কঠিন বিচার চাই, যাতে করে আর কোন মেয়ের সাথে এই রকম না হয়।
রিনার মা ছালেহা বেগম বলেন, আমার একটি মাত্র মেয়ে তার জীবন টা এই ভাবে শেষ হয়ে যাবে তা কোনদিন ও ভাবি নাই। আমার মেয়ের জীবনটা একদম শেষ, শাওন আমার বাড়িতে এসে বিয়ে করেছে আমার মেয়েকে এখন সংসার করবেনা।
তা হলে আমার মেয়ের সর্বনাশ কেন করলো, আমি এটার বিচার চাই। সরকারের কাছে দাবী এটার যেন সুষ্ঠু বিচার পাই আমরা।
স্থানীয় শামসুল সিকদার বলেন, আমরা এলাকাবাসী সবাই জানি যে ওই ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে,কিন্তু এখন সংসার করছে না কেন, তা জানিনা, মেয়েটা খুব ভালো আমরা চাই ছেলেটা সংসার করুক।
মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কবির হোসেন সোবহান বলেন, আমি সাক্ষি থেকে বিয়ে করিয়েছি, কিন্তু হঠাৎ করে কি ভাবে এই ছেলে অস্বীকার করছে তা মাথায় আসে না। আমরা এই ছেলের বিচার চাই।
এস আই আনোয়ার হোসেনের মুটোফোনে কল করলে সে রিসিভ করে বলে আমি আনোয়ার নই অন্য জন। আমি আনোয়ারকে চিনিনা বলে ফোন রেখে দেন।
অভিযুক্ত শাহিন আলম শাওন বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল প্রকার অভিযোগ মিথ্যা, আমি কোন নির্যাতন করিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানিনা, যদি এসআই আনোয়ার হোসেন এই কাজ করে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত সেনা সদস্য শাহিন আলম শাওনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্ত্রী রিনা আক্তার।