2:19 am, December 24, 2024

ভূঞাপুরে সাবেক কাউন্সিলর এর নিয়োগ বানিজ্য ও চাঁদাবাজি থেকে শত কোটির সম্পদ

প্রবাহ ডেস্ক :

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ঘাটান্দি গ্রামের খন্দকার মোশারফ হোসেনের ছেলে খন্দকার জাহিদ হোসেন।

খন্দকার জাহিদ হোসেন ছিলেন ভূঞাপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির যুব সংহতির সভাপতি। সে সময় বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের দেয়া টাকায় চলতে হতো খন্দকার জাহিদ হোসেনকে।

পরে ২০১৪ সালে ভূঞাপুর পৌরসভা নির্বাচনে ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন খন্দকার জাহিদ।

কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন শালিস বৈঠকে দুই পক্ষের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া শুরু করেন তিনি। এতে অন্যান্য কাউন্সিলরদের মধ্যে দেখা দেয় ক্ষোভ। একই বছর জাতীয় পার্টি ছেড়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের হাতে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে বাগিয়ে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ। এরপর থেকে আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

সক্ষতা গড়ে উঠে ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সাথে। শুরু করেন পুলিশে নিয়োগ, বদলি বানিজ্য ও চাঁদাবাজি। এ ছাড়া পুরো ভূঞাপুর উপজেলায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করতেন কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন। এত কিছুর পরও ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের ঘনিষ্টজন হওয়ায় জাহিদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না।

অভিযোগ রয়েছে গোলাম ফারুককে দিয়ে পুলিশে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বানিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর এই সিন্ডিকেটের মুল হোতা হচ্ছেন গোলাম ফারুকের ছোট ভাই খন্দকার সুরুজ ও কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন।

তবে জাহিদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগও দিয়েছেন ভূক্তভোগিরা।

জানা যায়, সম্প্রতি সাবেক সাব রেজিস্ট্রার হায়দার আলীর সাথে পরিচয় হয় কাউন্সিলর জাহিদের সাথে। পরিচয়ের কয়েক দিন পর জাহিদের কাছ থেকে সাব রেজিস্ট্রার হায়দার আলী ১০ লাখ টাকা ধার নেন। ধার নেওয়ার প্রায় এক মাস পরেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। ওই দিনই জাহিদ দাবি করেন হায়দার আলী তার কাছ থেকে এক কোটি টাকা ধার নিয়েছেন।

কিন্তু হায়দার আলীর পরিবার এক কোটি টাকা বিষয়ে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

শালিসে খন্দকার জাহিদ হোসেন প্রভাব খাটিয়ে হায়দার আলীর ৫ কোটি টাকার ‘মীম’ ইট ভাটা ৩ কোটি টাকা মূল্য ধরে তা লিখে নেন। এরপর থেকেই সাবেক সাব রেজিস্টার হায়দার আলীর পরিবার ভূঞাপুর থেকে চলে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, জাহিদ হোসেন কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সক্ষতা গড়ে তুলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার গোলাম ফারুকের সাথে। এরপর থেকে গোলাম ফারুকের প্রভাব খাটিয়ে এবং তার ভাতিজা পরিচয়ে শুরু করেন বিভিন্ন বালুর মহালে চাঁদাবাজি, পুলিশে নিয়োগ বানিজ্য।

এ ছাড়াও এক থানা থেকে আরেক থানায় বদলির জন্যও বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে নিয়েছেন প্রায় কয়েক কোটি টাকা।

এ ছাড়া জাহিদ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত পুস্পকলি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিষ্টিক বিদ্যালয়ে চাকুরী দেওয়ার নাম করেও বিভিন্ন জনের কাছ থেকেও নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। মাঝে মাঝে সেসব চাকুরী প্রার্থীরা বিদ্যালয়ে এবং জাহিদের বাড়িতে গিয়েও টাকা ফেরত না পাওয়ায় হতাশায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

এ ভাবে পুলিশে নিয়োগ বানিজ্য করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। কিনেছেন জায়গা-জমি, ট্রাক। এ ছাড়াও ঢাকায় রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা মুল্যের ফ্লাট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাহিদের এক ঘনিষ্টজন জানান, তিনি (জাহিদ) মুলত গোলাম ফারুকের মাধ্যমে পুলিশে নিয়োগ বানিজ্য করে এবং তার বিদ্যালয়ের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান এনে অন্তত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে জাহিদ সবার বড়। ছোট ভাইকে চাকুরী নিয়ে দিয়েছেন পুলিশ হাসপাতালে। আরেক ভাই বর্তমানে বেকার।

তবে জাহিদ হোসেন শত কোটি টাকার মালিক হলেও তার বাবা মোশারফ হোসেন এখনো ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডে বিভিন্ন যানবাহন দেখাশোনা করেন।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর পৌরসভার কাউন্সিলর খন্দকার জাহিদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে মোবাইলে এ বিষয়ে ক্ষুদে বার্তা দিলেও কোন মন্তব্য করেননি তিনি।

টা/প্র/অ/(২ অক্টোবর)।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ
- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরো খবর

- Advertisement -spot_img