প্রবাহ ডেস্ক :
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে দেশটির ঠিক কোথায় তিনি অবস্থান করছেন সেই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও তথ্য জানায়নি ভারত সরকার।
এ মতাবস্থায় সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা বর্তমানে রাজধানী নয়াদিল্লির লুটিয়েনস বাংলো জোনের একটি সেইফ হাউসে অবস্থান করছেন। এবার একই তথ্য জানিয়েছে দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেট ও খান মার্কেটের কাছেই একটি বাংলোতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা।
অত্যন্ত সুরক্ষিত সেই বাংলোতে আছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে শেখ হাসিনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার কথা ভেবে উল্লেখিত সেই বাংলোর নির্দিষ্ট ঠিকানা প্রকাশ করেনি ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যমটি।
সংবাদ মাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় দুই দশক ধরে শেখ হাসিনা ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ৩৬০০ বর্গ মিটার বিস্তৃত ম্যানিকিউর বাগানে ঘেরা একটি বিস্তীর্ণ প্রাসাদে বাস করতেন এবং এটি মূলত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের থাকার জন্য নির্মিত হয়েছিল।
তবে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং উত্তর প্রদেশের হিন্দন বিমান বাহিনী ঘাঁটির কাছে একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে সামনে আসছে যে, ৭৭ বছর বয়েসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী এখন দিল্লির ইন্ডিয়া গেট এবং খান মার্কেটের কাছে দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে একটি সুরক্ষিত বাংলোতে বসবাস করছেন।
ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ওই বাংলোতে বেশ কয়েকটি স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিভিন্ন নৃশংসতার পাশাপাশি গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগসহ বহু মানুষের কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ওই কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে শেখ হাসিনা হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে তিনি দিল্লির লুটিয়েনস বাংলোতে বসবাস করছেন।
এর আগে গত মাসে ফিনান্সিয়াল টাইমসের একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল, তাকে (হাসিনাকে) লোধি গার্ডেনে দেখা গেছে।
ওপরে উদ্ধৃত ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেছেন, হাসিনার নতুন এই বাসভবনটি আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স সংস্থা “ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি)” একটি সেফহাউস।
তবে হাসিনার জীবনের প্রতি হুমকির কথা উল্লেখ করে তারা এই বাসভবনের সঠিক অবস্থান প্রকাশ না করতে বলেছেন।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এই ধরনের সমস্ত সেফ হাউসের অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের নিরাপত্তা কর্ডন দেশটির কেন্দ্রীয় এই সংস্থার কর্মকর্তারা দেখাশোনা করেন।
এ ছাড়া বাংলোর নিরাপত্তায় দিল্লি পুলিশের কমান্ডো ইউনিটের “পর্যবেক্ষক এবং স্পটার” চারপাশে মোতায়েন করা হয়ে থাকে। তারা মূলত বাংলোকে ঘিরে কোনও ধরনের সন্দেহজনক কার্যকলাপ এবং লোকজনের ওপর নজরদারি রাখার কাজ করেন বলে উপরে উদ্ধৃত এক কর্মকর্তা বলেছেন।
দ্বিতীয় একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হাসিনাকে হিন্দন বিমান ঘাঁটি থেকে দিল্লিতে আনার পর দিল্লি পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টরকে (এসআই) কয়েকদিনের জন্য আইবি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে হাসিনার নিরাপত্তা প্রোটোকলে যুক্ত করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে দ্বিতীয় ওই কর্মকর্তা বলেন, “সাব-ইন্সপেক্টরকে খুব স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল— গোপন এই কর্মকাণ্ড এবং সেফ হাউসের ঠিকানা সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত এবং পেশাগতভাবে চেনাশোনা কাউকেই যেন এটি না জানানো হয়।
এসআইকে বলা হয়েছিল, দিল্লি পুলিশ প্রধান বা তার তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তাদের কেউ এটি জিজ্ঞাসা করলেও এ বিষয়ে তার কোনও তথ্য প্রকাশ করা উচিত নয়।
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) এবং ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ওই এসআইকে দুই বা তিন দিন পরে নিরাপত্তা প্রোটোকল থেকে প্রত্যাহার করা হয়।