প্রবাহ ডেস্ক :
টাঙ্গাইলে দুটি হত্যাসহ তিন মামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পরে ওই তিন মামলায় তাকে পাঁচ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে আব্দুর রাজ্জাককে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়।
এ সময় তার বিচারের দাবিতে বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী, গণঅধিকার পরিষদ ও জামায়াতে ইসলামির নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারেন।
আদালত সূত্রে, আব্দুর রাজ্জাককে প্রথমে টাঙ্গাইলের মধুপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়।
সেখানে তাকে গত (৪ আগস্ট) মধুপুর উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ।
শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মোহসীন তাকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত (৪ আগস্ট) মধুপুর উপজেলা সদরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর হামলা করা হয়। এতে কয়েক জন আহত হয়।
এ ঘটনায় গত (২৫ সেপ্টেম্বর) মো. জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মধুপুর আমলী আদালতে মামলা করেন।
এই মামলায় আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়।
আদালত মামলাটি গ্রহণের জন্য মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
টাঙ্গাইল সদর আমলী আদালতে হাজির করা হয় আব্দুর রাজ্জাককে।
সেখানে টাঙ্গাইল শহরে গত (৫ আগস্ট) গুলিতে নিহত স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।
শুনানি শেষে ওই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পশুপতি বিশ্বাস আসামি আব্দুর রাজ্জাককে মারুফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো এবং ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালত সূত্রে, গত (৫ আগস্ট) টাঙ্গাইল শহরের মেইন রোডে ছাত্র জনতা বিজয় মিছিল বের করে।ওই মিছিলে হামলা ও গুলি করা হয়।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্কুলছাত্র মারুফ নিহত হয়।
এ ঘটনায় নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বাদী হয়ে গত (১৮ আগস্ট) টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
এতে আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামি করা হয়।
পরে আব্দুর রাজ্জাককে মির্জাপুর আমলী আদালতে হাজির করা হয়।
সেখানে পুলিশ মির্জাপুরে গুলিতে নিহত কলেজছাত্র ইমন হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো এবং ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানি শেষে বিচারক ইসমত আরা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাককে ইমন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন এবং ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে টাঙ্গাইল জেলা অ্যাডভোকেট বারের সভাপতি একেএম শামীমুল আক্তারসহ প্রায় ২৫ জন আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেন।
তারা আব্দুর রাজ্জাকের জামিন প্রার্থনা করেন।
অপরদিকে, টাঙ্গাইলের নব-নিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিকুল ইসলাম রিপনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাকের জামিনের বিরোধিতা করেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাককে আদালতে হাজির করা হবে এ খবর পাওয়ার পর সকাল থেকে বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা, জামায়াত ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা আদালত এলাকায় অবস্থান নেয়।
তারা আদালতে প্রবেশের বিভিন্ন পথে অবস্থান করতে থাকেন।
বিভিন্ন সময় মিছিলও বের করেন।
পরে বিকেলে আব্দুর রাজ্জাককে বহনকারী প্রিজন ভ্যান আদালত এলাকায় প্রবেশ করে।
বিক্ষোভকারীরা এ সময় ওই ভ্যান ঘিরে আব্দুর রাজ্জাকের বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
তারা আব্দুর রাজ্জাকের দিকে ডিম ছুড়ে মারে।
তাকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বিক্ষোভ করে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ জানান, প্রথমে টাঙ্গাইল সদর থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুর রাজ্জাককে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হবে।
টা/প্র/অ/(১১ নভেম্বর)।