10:28 pm, December 23, 2024

২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলায় ১৭ বছর কারাভোগ, বরণের অপেক্ষায় রয়েছে টাঙ্গাইলবাসী

প্রবাহ ডেস্ক :

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির সাবেক উপ-মন্ত্রী ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সাবেক এমপি আব্দুস সালাম পিন্টু ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালাস পাওয়ায় টাঙ্গাইলের বিএনপির নেতাকর্মীরা পূর্বের অন্তঃকোন্দল ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

টানা ১৭ বছর কারাভোগের পর গত রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে সালাম পিন্টুর খালাস পাওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষনিক শহরে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি ও সহযোগিত অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এ সময় নেতাকর্মীদের পূর্বের অন্তঃকোন্দল ভুলে গিয়ে কাঁধে-কাঁধ ও হাত হাতে রেখে আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায়। আগামীতে যে দলের স্বার্থে যে কোন নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রস্তুত তারা। তাকে বরণের অপেক্ষায় রয়েছে টাঙ্গাইলবাসী।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টাঙ্গাইলে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ নানা ভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপ-মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু।

২০০৮ সালের জানুয়ারীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেফতরের পর থেকে কারাগারেই ছিলেন তিনি। গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও ছিলেন তিনি।

আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু একাধিকবার কারাভোগ করেছেন।

এ ছাড়াও অপর আরেক ভাই শামছুল আলম টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মামলা ও হামলা শিকার হয়েছেন একাধিকবার। নির্বাচনী এলাকায় তার বাসা ও সম্পত্তিতে তান্ডব চালানোর অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

এ দিকে গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামী হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ। গ্রেপ্তারের পর থেকে আব্দুস সালাম পিন্টু মুক্তি পরিষদ গঠন করে জেলা, উপজেলা, শহর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে।

এ বিষয়ে সালাম পিন্টু মুক্তি পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহজাহান কবির জানান, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সালাম পিন্টু টাঙ্গাইলে আসার সময় মহাসড়কের প্রবেশ পথ থেকে জেলা শহর ও তার নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভূঞাপুর-গোপালপুরে বড় ধরনের উষ্ণ সংবর্ধনার প্রস্তুতি চলছে।

আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসন থেকে সংসদ নির্বাচিত হন।

২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত সরকার জোট সরকার গঠনের পর তিনি উপ-মন্ত্রীর (শিক্ষা) দায়িত্ব পান। ২০১৯ সালে (১৬ মে) আব্দুস সালাম পিন্টুর বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে গরু চুরিসহ লুটপাটের মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

অভিযোগে ২০০১ সালের (১ অক্টোবর) অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভূঞাপুর উপজেলার ভদ্রশিমুল গ্রামের এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, চুরি ও মারপিটের অভিযোগ আনা হয় পিন্টুসহ ১১জনের বিরুদ্ধে। এ মামলার বাদি ছিলেন ভূঞাপুরের গাবসারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া।

এ ভাবে অসংখ্য মামলা দিয়ে হয়রানি, রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে হেনস্থাসহ নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম পিন্টু।

আবদুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলাধীন যমুনা বিধোত গুলিপেচা গ্রামের ডা. মরহুম মহিউদ্দিন মিয়ার জ্যৈষ্ঠ সন্তান। ডা. মহিউদ্দিন এলাকায় মহু ডাক্তার নামে পরিচিত ছিলেন।

৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর আঙ্গুর কোম্পানী, হাকিম কোম্পানী, ভোলা কোম্পানী ও আরজু কোম্পানীর সকল সদস্যকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন। সিরাজকান্দির চরে যমুনা নদীতে পাক বাহিনীর ভারী যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী একটি জাহাজ মুক্তিবাহিনী ডুবিয়ে দেয়। সে সময়ে এটি ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এক যুগান্তকারী ঘটনা। সে সময় এই ঘটনা দেশে বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে।

রাতারাতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীকে বাঘা সিদ্দিকী উপাধি দিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়। এই খবরে গোটা দেশবাসী উৎফুল্ল হয়ে উঠে।

মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, ভারী সমরাস্ত্র বোঝাই ওই জাহাজটি উত্তরবঙ্গ সীমান্তে পৌঁছতে পারলে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তো। জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার সাথে জড়িত মুক্তিযোদ্ধারাও এসে মহু ডাক্তারের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়।

তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিল টাইফয়েড আক্রান্ত। মহু ডাক্তার তাদের সবাইকে বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন। মহু ডাক্তারের বড় ছেলে আবদুস সালাম পিন্টু। ৭১ সালে পাক-বাহিনী যে দিন প্রথম ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল মার্চ করে নাটিয়া পাড়া ব্রীজে সালাম পিন্টুর নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়।

সেখানে বেশ কিছু সময় যুদ্ধ চলার পর পাক-বাহিনীর ভারী অস্ত্রেশস্ত্রের আক্রমণে টিকতে না পেরে প্রতিরোধকারীরা প্রতিরোধ তুলে নিতে বাধ্য হন।পরে সালাম পিন্টু বাড়ী ফিরে যাবার সময় পাকুটিয়া এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। পরে বহনকারী গাড়ী পুকুরে পড়ে যায়।

এতে গুরুত্বর আহত হয়ে দীর্ঘদিন তিনি বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা নেন। স্বাধীনতার পরে তিনি ওকালতি পাস করে টাঙ্গাইলে আয়কর আইনজীবী হিসাবে প্রাকটিস শুরু করেন।

পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করলে তিনি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি বিএনপিতেই আছেন।

টা/প্র/অন্তু (৩ ডিসেম্বর)।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
সর্বশেষ
- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরো খবর

- Advertisement -spot_img