প্রবাহ ডেস্ক :
টাঙ্গাইল জেলা কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ঘর গোপনে নিজ নামে লিখে নেয়া আবু তাহের চৌধুরীর ভাই আবু সাঈদ চৌধুরীকে কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করায় ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনের দোহাই দিয়ে তালা ভেঙে ঘর দখল নেয়াসহ পূনরায় নেতৃত্ব নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন সদ্যবিদায়ী আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ওই দুই ভাই বলে অভিযোগ সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীদের।
নকল ফেরো গ্লোবিন সিরাপ বিক্রির অপরাধে পুলিশের কাছে আটক হওয়াসহ এক ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিকে থাপ্পর মারার অপরাধে বিচারের সম্মুখিন হওয়ার অভিযোগ রয়েছে আবু তাহের চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও ওষুধ কোম্পানী ও সমিতি বিরোধী নানা কর্মকান্ডের কারণে কমিটি থেকে বাদ পরেছিলেন সমিতির বর্তমান আহ্বায়ক আবু সাইদ চৌধুরী।
তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা ১৭ বছর সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আবু তাহের চৌধুরী।
সরকার পরিবর্তন হতে না হতেই ওষুধ ব্যবসায়ী দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে বইছে এমন সব আলোচনা সমালোচনা।
অন্যদিকে, সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্র অনুমোদিত নয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।
দ্রুত সমিতির ঘর দখলমুক্ত করাসহ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ওষুধ ব্যবসায়িরা।
জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ৫ মার্চ শুরু হয় টাঙ্গাইল জেলা কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কার্যক্রম।
এ ছাড়াও ২০০৩ সালে টাঙ্গাইল পৌর শহরের মেইন রোডে মেডিসিন মার্কেটে স্থাপিত হয় সমিতির কার্যালয়।
অভিযোগ ও রেজুলেশনে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১২ জানুয়ারী ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিনিময়ে টাঙ্গাইল জেলা কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ঘর নিজ নামে লিখে নেয়া আবু তাহের চৌধুরী ফেরত দেন ও ২৫ ফেব্রুয়ারী কেন্দ্রীয় সমিতির পক্ষে কেন্দ্রীয় সভাপতি ছাদেকুর রহমানের নামে দলিল করে দেন।
১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১৭ বছর সমিতির সহ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বরত ছিলেন আবু তাহের চৌধুরী। ক্ষমতার বলে আর টাকার লোভে দি একমি কোম্পানীর ফেরো গ্লোবিন সিরাপ নকল করে বিক্রির অপরাধে পুলিশের কাছে আটক হওয়াসহ এক ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিকে থাপ্পর মারার অপরাধে বিচারের সম্মুখিন হন আবু তাহের চৌধুরী।
একই সাথে ড্রাগ লাইসেন্সের ২৫/৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান জিন্নাহর বিরুদ্ধে।
এ ছাড়াও ওষুধ কোম্পানী ও সমিতি বিরোধী নানা কর্মকান্ডের কারণে কমিটি থেকে বাদ পরেন সমিতির একাংশের সদস্যদের ঘোষিত বর্তমান আহ্বায়ক আবু সাইদ চৌধুরী।
চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর আবু সাঈদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনহীন কমিটি গঠণ করা হয়।
পূনরায় লুটপাটের ভাবনায় বিতর্কিত ব্যক্তিরা আবার সোচ্চার হচ্ছেন বলে দাবী করেছেন ভুক্তভোগী ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওষুধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা অভ্যুত্থানের সুযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীরাই নতুন কমিটি করার নামে দখলের পায়তারা করছেন। সমিতি অফিসে তালা ভেঙে ও লুটপাট করেছেন তারা। কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ব্যতিত আর জেলা কমিটি দায়িত্বে থাকতেই তারা কমিটির দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন।
এটা কোন গণতান্ত্রিক মনোভাব হতে পারেনা। যারা এখন নেতৃত্ব চাইছেন, তারাই আওয়ামীলীগ সরকারের ১৫ বছর দেদারসে ওষুধের ঠিকাদারী করেছেন।
এ ছাড়াও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে সমিতির ঘর নিজ নামে দলিল করে নেয়াসহ নকল ওষুধ বিক্রির অপরাধে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পাশাপাশি ড্রাগ লাইসেন্সের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
সমিতির ঘর পূনরায় দখল ও তালা ভেঙে লুটপাট চালালোর কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা কমিটি নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি মধুপুর উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুস ছালাম জানান, মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি জেলায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে।
তবে উপজেলা শাখায় ওই কমিটির লিখিত কোন কাগজ পাইনি। এ ছাড়া জেলা কমিটির সভাপতি মনির আহমেদ মনাকে সমিতি অফিসে যেতে বারণ করা হয়েছে বলেও শুনেছি।
কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি করটিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক গৌর চন্দ্র শীল জানান, আবু তাহের চৌধুরী সমিতির ঘর নিজ নামে লিখে নেয়া ও নকল ওষুধ বিক্রির অপরাধে আটক হওয়ার বিষয়গুলো তিনি জানতেন।
তবে নতুন কোন আহ্বায়ক কমিটি গঠণের তথ্য পাননি তিনি। কমিটির কে আহ্বায়ক আর কে সদস্য সচিব সেটিও জানেননা তিনি। টাকা আত্মসাতের বিষয়গুলো জেলা কমিটি জানেন।
রেজিষ্ট্রিপাড়ার মেডিসিন পার্ক এর মালিক উত্তম কুমার পোদ্দার জানান. আবু তাহের চৌধুরী সমিতির সহ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সমিতির কার্যালয়ের দলিল নিজ নামে করে নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে আবার সেটি সমিতির নামে লিখে দিয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত মুঠোফোনটি বন্ধ থাকায় সমিতির সাবেক সহ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের চৌধুরীর বক্তব্য নেয়া যায়নি।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাংশ ঘোষিত জেলা কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই কমিটি নেতৃবৃন্দকে কেবিনেটের চেয়ারে বসা নিষেধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আমাদের কমিটি কেন্দ্রের অনুমোদন না পেলেও সাধারণ ওষুধ ব্যবসায়ীদের সমর্থন নিয়ে কেবিনেটের চেয়ার ব্যবহার করছে।
তিনি জানান, বৈধ প্রক্রিয়া আর টেন্ডারের মাধ্যমে আমি ওষুধ ব্যবসা করে আসছি। কোন দল বা নেতা ম্যানেজ করে নয়।
এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ওষুধ সাপ্লাই দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, ভাড়াকৃত সমিতি ঘরের ভাড়া দীর্ঘদিন দিতে না পারায় ঘরের মালিক সেটি আমার বড়ভাই তাহের চৌধুরীর কাছে বিক্রি করেন।
বড় ভাই সমিতির সহ-সভাপতি হয়ে কি ভাবে ঘরটি কিনলো এমন প্রশ্ন তুলে ষড়যন্ত্র শুরু করায় ঘরটি সমিতির নামেই দলিল করে দেয়া হয়। স্বৈরাচারী প্রক্রিয়ায় সমিতি পরিচালিত হওয়ায় আমি বেশ কিছুদিন কমিটির বাইরে ছিলাম।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক ও জেলার সভাপতি মনির আহমেদ মনা বলেন, আমি বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির পরিচালক।
এ ছাড়াও আমি জেলার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। টাঙ্গাইল জেলা শাখা থেকে একটি আহ্বায়ক কমিটি কেন্দ্রে এসেছে।
তবে অনুমোদন পায়নি। এরপরও ওই কমিটি নেতৃবৃন্দ জোড়পূর্বক সংগঠণের কাজ করছে।
তিনি বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ীদের একাংশের অনুমোদনহীন কমিটির ঘোষিত আবু সাঈদ চৌধুরী আওয়ামীলীগের ১৫ বছর নেতাদের ম্যানেজ করে ও এককভাবে সরকারী হাসপাতালে ওষুধ সাপ্লাইয়ের কাজ করেছেন।
৫ লাখ টাকার ওষুধ সরবরাহ করে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই টাকার ভাগ নেতাদের দিয়ে আওয়ামী লীগের অনুগত ছিলেন আবু সাঈদ চৌধুরী।
তিনি আর বলেন, ইতোপূর্বে তার বড়ভাই ও সমিতির তৎকালীন সহ-সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী জালিয়াতির মাধ্যমে নিজ নামে সমিতির জমি দলিল করে নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে সেই জমি সমিতির নামে লিখে দিয়েছেন।
এ ছাড়াও তারা ড্রাগ লাইসেন্সের প্রায় ২৫/৩০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
তালা ভেঙে সমিতির ঘরে প্রবেশ ও লুটপাট চালানোর দায়ে অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
টা/প্র/অ/