প্রবাহ ডেস্ক :
শুধু ফল হিসেবে পুষ্টি-গুণ-সমৃদ্ধ নয় আনারস, এটির পাতারও ব্যবহার হয় বিভিন্ন কাজেও। আনারস তোলার পর পাতা ফেলে রাখা হতো অথবা গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতো।
কিন্তু বর্তমানে এই পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন সুতা ও শৌখিন পণ্য। সেই সঙ্গে মিলছে অর্থকড়িও। ক্রমে এর উৎপাদন এবং ব্যবহারেরও প্রসার ঘটছে।
টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় আনারস উৎপাদনে প্রসিদ্ধ। এখানকার নারীরা প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে ঘর-গৃহস্থালির কাজে লাগে এমন কিছু শৌখিন জিনিসপত্র বানালেও পাতা থেকে সুতা উৎপাদনে হাত দেয় তারা ‘মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি বাংলাদেশ’ নামের একটি বিদেশি সংস্থায়।
২০০৮ সালের কথা, এ সংস্থার প্রকল্পটি ছিল মধুপুর উপজেলার জলছত্র বাজারে।
পরে ২০১৭ সালে এসে বনাঞ্চলের জাঙ্গালিয়া গ্রামে ব্যুরো বাংলাদেশ একটি হস্তশিল্পের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আনারস চাষিদের ফেলে দেওয়া পাতারও সদ্গতি হয়েছে। ফলে তারা আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছে।
ফাইবার এক্সট্রাকশন মেশিনের মাধ্যমে আনারস পাতা থেকে আঁশ বের করা হয়। তারপর ভাঙা প্লেট ও নারিকেলের খোল দিয়ে ঘষে পাতা থেকে আঁশ বের করে পানিতে ধুয়ে নেওয়া হয়।
পরে সেগুলো রোদে শুকাতে দেওয়া হয়। এক কিলো পাতা থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা শক্ত সুতা পাওয়া যায়। আঁশ বের করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩০ জন মানুষের সাহায্য লাগে। ১ হাজার কেজি পাতা থেকে ১০০-১৫০ কেজি আঁশ পাওয়া যায়।
এই সুতার বিভিন্ন মুখী ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে সুতাগুলো হাতে রশি পাকিয়ে হস্তশিল্প ও গৃহসজ্জার সহ বিভিন্ন রকম জিনিসপত্র বানানো যায়।
এ ছাড়াও সুতা থেকে উন্নতমানের কাপড়ও তৈরি হয়। তা ছাড়াও আনারস পাতা থেকে উৎপাদিত সুতা দিয়ে উন্নতমানের লেদার বানানোর কাজে এটি দেশের বাইরে রফতানি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মধুপুর বেরীবাইদ গ্রামের ফিরোজ মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন তিনি। আনারসের পাতা থেকে এত সুন্দর পণ্য তৈরি হতে পারে তা আগে জানতাম না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সব জানতে পেরেছি।
তার মতো আরও অনেক শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। তারা আনারস চাষের পাশাপাশি বাড়তি উপার্জন করতে পার্টটাইম কাজ করছেন।
অন্যদিকে, আনারস চাষি আব্দুল হাই বলেন, একটি পরিপূর্ণ আনারস গাছে ৩৬টি পাতা হয়। একটি গাছে একবারই ফল ধরে। ওই গাছের গোড়ায় নতুন গাছ জন্মায়। আনারস কাটার পর ওই গাছের অন্তত ১৫-২০টি পাতা কেটে ফেলা হয়।
আর নতুন গাছ হওয়ার পর সব পাতাই কাটা যায়। এই পাতাগুলো নিচে পড়ে নষ্ট হয়। মাটিতেই পচে মিশে যায়। কেউ কেউ গবাদিপশুর জন্যও নিয়ে যান।
কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমরা বিক্রি করছি। আনারস বেচার টাকার পাশাপাশি বাড়তি টাকা পাচ্ছি পাতা বিক্রি করে।
এ ব্যাপারে ব্যুরো বাংলাদেশ হস্তশিল্পের কারখানার (এজিএম) আমীর হামজা বলেন, নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন শৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করা হচ্ছে। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আগে যারা আনারস বাগানে কাজ করতেন, সে সব নারী আমাদের এখানে কাজ করছেন।
এখানে ৭০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ নারী। যারা সুবিধাবঞ্চিত নারী, স্বামী পরিত্যক্তা নারী তারাই এখানে বেশি কাজ করেন। এখানে প্রায় চারশ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আমাদের এখানে মজুদ আছে অনেক পণ্য। সেই কারণে আমরা উৎপাদন আপাতত কমিয়ে দিয়েছি।
তবে আমরা একটি কম্পমেস কারখানা তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানের বাগানগুলো যদি সরকারের পক্ষে আমাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে তাহলে উৎপাদিত পণ্য গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা যেত বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে নারী উদ্যোক্তা ও ব্যুরো ক্রাফটের পরিচালক রাহেলা জাকির জানান, এ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস বেশি।
অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এই মানুষদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে মধুপুরে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। চীনের একটি মেলায় তারা অংশগ্রহণ করে এ সব পণ্যের বেশ সাড়া পেয়েছেন।
এ ছাড়া আরও অনেক দেশই হস্তশিল্পের এ পণ্যের প্রতি আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
টা/প্র/অন্তু/(৭ অক্টোবর)।