আজিজুল হক (নাগরপুর প্রতিনিধি) :
বাংলার আবহমান ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নরসুন্দর বা নাপিত পেশা আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বর্তমানে শহর-বন্দর ও গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে রয়েছে এসি ও নন-এসি সেলুন।
এতে চুল ও দাড়ি কাটার জন্য রয়েছে আধুনিক সাজসরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। এই আধুনিকতায় হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের চুল ও দাড়ি কাটার চিত্র।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নরসুন্দরদের এই পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে। মাঝে মধ্যে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজারে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের কর্মযজ্ঞ। হাটবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারাই নরসুন্দরদের ‘সেবা গ্রহীতা’।
গত বুধবার (৬ নভেম্বর) হাটের ব্যস্ততম দিনে নাগরপুর সরকারি যদুনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমান নরসুন্দরের।
সরেজমিনে, কাস্টমারদের পিঁড়ি বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাড়ি কাটছেন।
নরসুন্দর সুরেশ চন্দ্র শীল বলেন, এই হাটে সপ্তাহে বুধবার বসে এই কাজ করি। ৩০-৩৫ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা ৫-১০ টাকা ছিল। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে ভাল ভাবেই সংসার চলতো।
কিন্তু বর্তমানে চুল কাটতে ৩৫-৪০ টাকা এবং দাড়ি কাটতে ১৫-২০ টাকা নেই। তবে এত কমদামে চুল দাড়ি কাটার মানুষ পাওয়া যায় কম। সারাদিনে ৩৫০-৪০০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। চুল কাটতে আসা ছানোয়ার মিয়া জানায়, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছে চুল কাটাতেন।
এখন তিনি নিজেই ও তার সন্তানের নাতিদের এনে চুল কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমি মধ্যবিত্ত মানুষ। সেলুনে চুলদাড়ি কাটাতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। আর এদের কাছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। সেলুন আর এদের কাজের মান প্রায় সমান।
দুয়াজানী কলেজ পাড়ার আহাম্মদ হোসেন বলেন, এখন সবাই চুল কাটায় আধুনিক সেলুন গুলোতে। একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নিছকই গল্প মনে হবে টুল-পিঁড়িতে বসে চুল দাড়ি কাটা।
উল্লেখ্য, দৈনন্দিন গ্রামীণ জীবনযাত্রায় দীর্ঘকাল ধরে নিয়োজিত নরসুন্দর বা নাপিত জনসাধারণদের বর্তমানে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগেকার দিনে তাদের আয় দিয়ে সংসার ভালোভাবে চললেও এখন তারা আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
তাই দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম নরসুন্দর বা নাপিত পেশা।