প্রবাহ ডেস্ক :
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ৬ বছরের গারো শিশুর ধর্ষণকারীকে সামাজিক প্রথা অনুযায়ী সালিশ করে রেহাই দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মধুপুর থানার ওসি এমরানুল কবির জানান। ক্ষুব্ধ পরিবার এ বিষয়ে মামলার পর পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, এরই মধ্যে শিশুটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।
অপরদিকে, জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটিও করেছে।
পুলিশ মামলার বরাতে জানান, গত (৭ নভেম্বর) শিশুটি কয়েকজন স্কুলবন্ধুর সঙ্গে গ্রামে খেলা করছিল। তখন মিশর ডিউ (২৪) নামে এক যুবক শিশুটিকে চিপসের লোভ দেখিয়ে ঘরে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে।
পরে শিশুটির মা শিশুর প্যান্টে রক্তের দাগ দেখতে পায়। তখন শিশুটি তার মাকে সব খুলে বলে। শিশুটির পরিবার মিশর ডিউয়ের বাবা সেলেশটিন নকরেককে বিষয়টি জানায়। সেলেশটিন বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি দেন।
তখন শিশুটির বাবা-মা তাদের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করেন।
মামলায় বলা হয়েছে, এক পর্যায়ে দুলাল কুবি নামে এক মাতব্বর বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসার উদ্যোগ নেন। ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টায় নামকাওয়াস্তে সামাজিক বৈঠক বসায়।
এ দিকে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিশুটির পরিবার (৮ নভেম্বর) মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দেয়। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (১১ নভেম্বর) অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করে। এবং শিশুকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে শিশুটির মা-বাবা জানান, মিশর ডিউ বখাটে প্রকৃতির। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
মধুপুর শোলাকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমরুশ সিমসাং বলেন, খবর পেয়ে তিনি ওই শিশুর বাড়িতে গিয়ে ছিলেন। প্রথমে চিকিৎসা নিতে বলেছেন এবং পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গারোদের নিয়মানুযায়ী পারিবারিকভাবে তারা মীমাংসার উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। কিন্তু মীমাংসা হয়নি। পরে তারা থানায় মামলা করেছেন।
এ ব্যাপারে মধুপুর শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রুস্তম আলী জানান, বিষয়টি কেউ তাকে জানায়নি। এ নিয়ে পরিষদে সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল- সেই আলোচনার মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন।
স্থানীয় মাতব্বর দুলাল কুবি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রথা অনুযায়ী মাহারাং (শনি পূজা) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরে মাহারাং অনুষ্ঠান করে অভিযুক্ত মিশর ডিউকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। শিশুটির পরিবার মামলা করেছে এমনটি তিনি শুনেছেন বলে জানান দুলাল কুবি।
এ ব্যাপারে আসামি মিশর ডিউ ও তার বাবা সেলেশটিন নকরেকের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোছা. রুমি খাতুন শিশুটির জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন।
এ দিকে শিশুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক সাদিয়া সিদ্দিকাকে আহ্বায়ক, চিকিৎসা কর্মকর্তা আবিদা সুলতানাকে সদস্যসচিব এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা মোছা. নাসরিন সুলতানাকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির প্রধান সাদিয়া সিদ্দিকা বলেন, শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। এরপর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত দিলে আজ সন্ধ্যায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল কবির জানান, শিশুটির বাবা মিশর ডিউকে আসামি করে মামলা করেছেন। শিশুটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে এবং হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চলছে।